অসহায় সন্তানের দুখিনী মা (গল্প)
লেখক - রনি আহম্মেদ
 |
প্রতীকী ছবি অসহায় সন্তানের দুখিনী মা |
সামনে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা, ভালো ফলাফলের উদ্দেশ্যে তাই শহরে এসে মেসে রয়েছি। প্রতিদিনের মতো আমাদের মেসে দুপুরে রান্নার করার জন্য কারও না কারও বাজারে গিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করতে হয়, তো আজকের এই গুরুদায়িত্বটা ছিল আমার, ম্যানেজার টাকা দিলো, আমি একটা ব্যাগ নিয়ে রীতিমতন বাজারে রওনা হলাম এবং বাজারে পৌঁছে আমাদের একটি পরিচিত দোকান থেকে আজকের জন্য প্রয়োজনীয় সকল পণ্য ক্রয় করতে শুরু করলাম। কেনা - কাটা প্রায় শেষ, এমন সময় একটা অল্প বয়স্ক মহিলাকে দেখলাম, একটি চার -পাঁচ বছরের শিশু সহ ব্যাগ নিয়ে বাজার করছে, বুঝলাম শিশুটি ওই মহিলার নিজেরই হয়- তো সন্তান, ছোট শিশুটির গায়ের ময়লা, ফ্যাকাশে, ছেড়া- জামা কাপড়, হাতে একটি টাকার কয়েন, মহিলাটির মুখে চিন্তার ছাপ, চোখের নিচের কালো কালির মতো দাগ পড়েছে! যা তার অল্প বয়সকে অতীতে পাঠিয়ে তাকে যেন, আরও বয়স্ক করে তুলেছে। সে আমার পরিচিত দোকানদারের দিকে এগিয়ে এলো, আমি আর দোকানদার, দোকানের ভিতর আমার বাজারের হিসাব-নিকাশের মশগুল। মহিলাটি এসে বলল, '' ভাই আপনার দোকানে উজ্জে আছে?" তো - দোকানদার বলল, '' হ্যাঁ আছে!" দেখলাম, মহিলাটি হাফ কেজি তা নিলেন এবং সেইসাথে মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, আলুসহ আরো অন্যান্য তরিতরকারি ক্রয় করলেন। খেয়াল করলাম, সে প্রতিটি জিনিস ক্রয়ের আগে সেইটা কত দাম জিজ্ঞাসা করছে! এবং, মনে- মনে তার হাতে রাখা টাকার দিকে তাকিয়ে হিসাব করছে। সে দোকানদারকে অনুরোধ করে বলছে, "ভাই একটু কম করে দাম ধরবেন। হাতে টাকা তো কম আছে!"
 |
ছবি:'অসহায় সন্তানের দুখিনী মা' পাতা লেখা |
আমি দোকানদারকে মহিলাটির আরজির জন্য সুপারিশ করলাম। দোকানদার আমার কথায় সায় দিলো, এবং কিছু জিনিসের বেশ কম দামই ধরল। আমি মহিলাকে বললাম, '' আপনাকে কেমন জানি চিন্তিত মনে হচ্ছে!" বিশ্বাস করুন, আমি তখন ওই মহিলার চোখে যেন, সঙ্গে- সঙ্গে অশ্রু দেখতে পেলাম! চোখে-মুখে চিন্তার ছাপ নিয়ে কম- বয়সী মহিলাটি আমাকে বলল, '' ভাই আমার বাড়িওয়ালার জন্ডিস হইছে কয়েকদিন যাবৎ বিছানায় পড়ে আছেন! সংসারে কোন আয়- রোজগার নাই, প্রতিদিন ঋণের দায়ে অনেকেই বাড়ির পরে এসে তাগাদা দিয়ে যাচ্ছে আমার কাছে! এই কয়দিন বাজার করতে না পারায় খেতে পারছি না! আজকে ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে বাজারে এলাম। '' আমি মহিলাটির দুঃখের কথা শুনে একটু আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লাম। তারপর মহিলাটি, দোকানদারকে জিজ্ঞাসা করল, '' ভাই কত টাকা হয়েছে? আমি পরক্ষণে দেখলাম, মহিলাটির কথা বলার সাথে সাথে মুখটা যেন আরো কালো হয়ে উঠেছে! আমার মনে হয় তার কাছে বাজার করার জন্য খুবই সামান্য টাকা ছিল, তো দোকানদার হিসাব করে বলল পনে একশ টাকা আপু! মহিলাটি যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। পরে সে আবার, তার স্বামীর জন্য পথ্য তরকারি হিসেবে সজিনাডাঁটা কেনার জন্য দোকানদারের কাছে দর-কষাকষি শুরু করলো, তার দাম চড়া শুনে তার মুখ আরও মলিন হয়ে গেল! কারণ, তার কাছে মাত্র পনের টাকায় ছিল! দোকানদার তার প্রতি মমতা দেখিয়ে ওই টাকারই কিছু সজিনাডাঁটা দিল! এমন সময়, হঠাৎ! দেখলাম মায়ের আঁচল ধরে দাঁড়িয়ে থাকা শিশুটি কান্না করে বলছে, '' আম্মু আমার একটা জুস কিনে দাও না! '' মহিলাটি জোরালো কন্ঠে তার শিশুটিকে বলল, '' -এই বেশি জ্বালাস না বুঝলি! আগে দেখি কি হয়। '' শিশুটি তার মাকে ঐ এক টাকার কয়েনটা দিয়ে বললো, "আম্মু! এই নাও তুমি কিনে দাও আম্মু! তৎক্ষণাৎ মহিলাটি তার অবুঝ শিশুটি কোলে তুলে নিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল," বাবা এই টাকা চলে না রে!"
All Copyright R A W Media 2021
1 মন্তব্যসমূহ
wow !
উত্তরমুছুনgreat story
Thanks for your comment